শূণ্য থেকে পরিশ্রম ও সততাকে পুঁজি করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। তাঁর নাম আমজাদ হোসেন। নিজের চেষ্ঠা আর পরিশ্রম ও সততার কারণে আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। নাম তার আমজাদ হোসেন। জন্ম ফরিদপুরের মাদারীপুর জেলার মাহমুদপুর গ্রাম।১৯৮৫ সাল। শিশু ছেলেটি ক্লাশ ফাইভের বৃত্তি পরিক্ষা দিয়েছে। বাড়িতে এসে কোনো কারণে বাবার সঙ্গে অভিমান করেন তিনি। এই অভিমান নিয়েই বাড়ি ছাড়লেন ছেলেটি। এক আত্নীয়ের সহযোগিতায় রাজধানীতে আসেন। শুরু হল, তার জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের।
১০-১১ বছরের শিশু ছেলে আমজাদ উপলদ্ধি করতে লাগলেন জীবনের বাস্তবতা। তবে কঠিন অভিমানী ছেলেটি রাজধানীতে পেটে ভাতে চাকুরী যোগাড় করে নেন। তা দিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। এরপর থেকে জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করছেন তিনি।কিন্তু সততার প্রশ্নে কখনো আপোস করেনি। আর পরিশ্রম ও সততাকে পুঁজি করে আজ তিনি রাজধানীর একটি জুতা প্রস্তুতকারক ও একাধিক বিপণন প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী। ছোট্ট সেই অভিমানী আমজাদ হোসেন আজ একজন সফল উদ্যোক্তা।
আলাপকালে তিনি জানান, বাবার সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। সেই সময়ের দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি। পেটে খাবার নেই, মাথা গোজার ঠাঁই নেই। তবুও প্রতিজ্ঞা করেছি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বাড়ি ফিরবো না। বলতে সংকোচ নেই, এমন সময় পার করেছি, একটি আলু সেদ্ধ আর পানি খেয়ে দিন চলে গেছে। এভাবে ৬ মাস পার হয়ে গেল একটি কাজের যোগাড় করতে পারিনি। অবশেষে কাজ জুটলো এলিফ্যান্ট রোডের একটি জুতার দোকানে। তারপর কেটে যায় দীর্ঘ সময়।
প্রায় ১৭ থেকে ১৮ বছর অন্যের দোকানে কাজ করেছি। এক সময় মনে স্বপ্ন দানা বাধঁল, নিজে যদি জুতা প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারতাম। কিন্তু পুঁজি তো নেই। তাছাড়া অন্যের দোকানে কাজ করে ক-টাকাই আর বেতন পাই। যে দোকানে কাজ করতাম সেই দোকানের মালিক কে আমার স্বপ্নের কথা জানালাম। তখন দোকানের মালিক প্রতি মাসে বেতন থেকে কিছু টাকা জমা রাখতে বললেন। এরপর শুরু হলো টাকা জমানোর পালা। এক সময় ২০ হাজার টাকা জমা হলো। তারপর এই টাকা দিয়েই শুরু হল স্বপ্নের যাত্রা।
তিনি বলেন, ছোট্টো একটি রুম ভাড়া নিলাম। ভাড়া ৬০০ টাকা। দোকানে কাজ (চাকরি) করার সময় পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে চলাফেরা করায় অনেক লোকের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরী হয়। তারা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা শুরু করলো।
আমজাদ হোসেন বলেন, সততার কারনে জুতা প্রস্তুতের কাঁচামাল বাকীতে দিতে লাগল ব্যবসায়িরা, তাছাড়া যে যেভাবে পারছে ছোট ছোট করে সহযোগিতা করেছে। দিনরাত পরিশ্রম করতে থাকলাম। প্রথম চালানেই মুনাফা হয়েছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কিছুদিন পর এলিফ্যান্ট রোডে একটি জুতার শো রুমের যাত্রা শুরু করলাম।
আমজাদ হোসেন বলেন, এক সময় স্বপ্ন ছিল জুতা প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান (কারখানা) করবো। পরে শো রুমও হয়েছে। এক এক করে আজ রাজধানীতে ৬ টি শো রুম করেছি। কখনও সততার প্রশ্নে আপোস করিনি। জুতা প্রস্তুত করতে গিয়ে মানের দিকে খেলায় রাখি, যাতে সব সময় গুনগতমান ঠিক থাকে। আর এ কারণে এক সময় বড় বড় ব্যান্ডের জুতাও প্রস্তুত করেছি। জুতা টেকসইয়ের বিষয়টি পেস্টিং এর উপর নির্ভর করে। আমাদের কারখানায় সব সময়ই উন্নতমানের পেস্টিং এবং অন্যান্য গুনগত মানের উপকরণ ব্যবহার করে থাকি।
আমজাদ হোসেন এখানেই থেমে যেতে চান না। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন দেশের মানুষকে সুলভ মূল্যে উন্নতমানের জুতা সরবরাহ করা। আর এ লক্ষ্যে বড় ধরনের ব্যান্ড তৈরী করতে চাই। সেই সাথে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমজাদ হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, অভিমান করে রাজধানীতে আসার পর বৃত্তি পেয়েছেন বলে জেনেছেন। কিন্তু তখন ফিরে যায়নি। পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন তিনি। বাবার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তারী পড়াবেন এবং ছেলে এই পেশার মাধ্যমে জনসেবা করবে। তবে ডাক্তার হতে না পারলেও জুতা প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী হয়ে বেশ কিছু লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরেছেন তিনি। আর তাই ডাক্তার হতে পারেননি বলে তার বাবা এখন আক্ষেপ করেন না। কারন তার ছেলে একজন সফল উদ্যেক্তা হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আমজাদ হোসেন বলেন, পরিশ্রমের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে অদম্য ইচ্ছা, সততা ও ধৈর্য একজন মানুষের স্বপ্ন পূরনের বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্যসূত্র: বিনিয়োগ বার্তা