যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই হুয়াওয়েকে ধ্বংস করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই। বিবিসিকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। রেন ঝেংফেই তাঁর মেয়ে ও হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই এটা করা হয়েছে।’
গত বছর চীন সরকারের চাপে বিদেশি টেলিকম সিস্টেমে আড়িপাতার অভিযোগ, মুদ্রা পাচার ও ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ে ও মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে হুয়াওয়ে।
গত ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে মেং ওয়ানঝুকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে কানাডার কর্তৃপক্ষ। হুয়াওয়ে ও মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের ঘটনার পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন রেন ঝেংফেই। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তার প্রতিবাদ জানাই আমি।। এই ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এখন আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি।’ তিনি বলেন, বিশ্ব আমাদের ছেড়ে চলে যাবে না কারণ আমরা সবচেয়ে উন্নত।
এমনকি যদি তারা সাময়িকভাবে হুয়াওয়ে ব্যবহার না করার জন্য আরও দেশকে প্ররোচিত করে, তারপরও আমরা টিকে থাকব। তবে সম্ভাব্য যে ক্ষতির মুখে পড়ছে হুয়াওয়ে তা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।’ গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হুয়াওয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের বিরুদ্ধে সহযোগী দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের পক্ষে ‘তাদের অংশীদার’ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ৫জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের হুয়াওয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এই কোম্পানির পণ্যতে গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি আছে কিনা তার পর্যালোচনা করছে কানাডা।
তবে এগুলোকে সেভাবে হুমকি হিসেবে দেখছেন না রেন ঝেংফেই। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব আমাদের ছেড়ে যেতে পারবে না, কারণ আমরা অনেক বেশি উন্নত। যদি পশ্চিমে আলো বন্ধ হয়ে যায় তবে পূর্ব তখনো আলো জ্বালিয়ে রাখবে। যদি উত্তর অন্ধকারে ঢেকে যায়, দক্ষিণে তখনো আলো থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র পুরো বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা শুধুমাত্র বিশ্বের একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।’
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করলেও যুক্তরাজ্যে এখনো পথ খোলা আছে বলে মনে করছে হুয়াওয়ে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সেন্টার বলছে যে, টেলিকম প্রকল্পগুলোতে হুয়াওয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো ঝুঁকি তৈরি হলে তাঁরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
ভোডাফোন, ইই ও থ্রিসহ যুক্তরাজ্যের অনেক মোবাইল কোম্পানি হুয়াওয়েয়ের সঙ্গে তাদের ৫জি নেটওয়ার্ক চালুর বিষয়ে কাজ করছে। তারা সরকারের পর্যালোচনার জন্য অপেক্ষা করছে। আগামী মার্চ অথবা এপ্রিলে হুয়াওয়ে ব্যবহার করা হবে কি না তার সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার।
যুক্তরাজ্যে হুয়াওয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেন ঝেংফেই বলেন, সম্ভাবনা কারণে আমাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হবে না। আমরা যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব। আমরা যুক্তরাজ্যের ওপর বিশ্বাস রাখছি। আশা করছি যুক্তরাজ্য আমাদের ওপর আরও বেশি বিশ্বাস রেখেছে। আমরা সেখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করার কথা ভাবছি।