1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

অসাধ্য সাধনে চাই আত্মবিশ্বাস চর্চা!

জীবনে চলার পথে আমাদের অনেকের সাথেই পরিচয় হয়। তবে আমি চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত নতুন কারো সাথে পরিচিত হতে, কিছু শিখতে এবং জানতে। সেই জানার আগ্রহ থেকে অনেক ধরণের প্রশ্নও জেগে বসে মনে। আর বড় ভাইয়াদের পেলেই চেষ্টা করি নিজের অজানা প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে। এভাবেই একদিন ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ গল্প হচ্ছিলো একজন ভাইয়ার সাথে, গল্পের মাঝে ভাইয়া নিজের ব্যক্তিজীবনের কথাগুলো শেয়ার করার সময় আমাকে বলতে শুরু করলো- ” আচ্ছা শোন, এখন থেকে একটা কাজ করবি। জীবনে যেখানে যাবি, যে কাজটি কররি সাথে একটা জিনিস নিয়ে যাবি “নিজের আত্মবিশ্বাসটা“।

কথাটি শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম সেদিন। এত কিছু থাকতে ভাইয়া এটার কথাই কেন বললেন। তবে ধীরে ধীরে ব্যাপারটি অনেক পরিষ্কার হয়ে যায় আমার কাছেও। জীবনে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রশ্ন যখনই সামনে চলে আসে ঠিক তখনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাস, যা কিনা প্রতিনিয়ত সাহায্য করে আমাদেরকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে। আর আত্মবিশ্বাস যেমন সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে ঠিক তেমনি আত্মবিশ্বাসহীনতা মনের মাঝে ভয় তৈরি করে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত করে। আত্মবিশ্বাস আমাদের অনেক অসাধ্য সাধনে সাহায্য করে যা আমাদের কল্পনারও বাইরে।

“আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রম ব্যর্থতা নামক রোগকে মারার সবচেয়ে বড় ওষুধ। এটাই আপনাকে একজন সফলকাম মানুষে পরিণত করবে”– এ পি জে আবুল কালাম

ভাইয়ার সেইদিনের কথার রেশ ধরেই আজকের লেখাটি। আপনি যদি বুঝে থাকেন আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন, অথবা, আরও ভালো হয় যদি আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন কিন্তু, কিভাবে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় তা জানতে আগ্রহী হোন তবে চলুন জেনে নেই এমন কিছু টিপস যা কিনা আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে আরো কয়েক গুনে।

নিজেকে জানুন: পরশ্রীকাতরতা আর হীনম্মন্যতা এই দুইটি বিষয় যেন আমাদের জীবনে চলার পথের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু বুঝিয়ে বলি, আমাদের অনেকের মাঝেই এই সমস্যাটি দেখা যায় অন্যের কিংবা নিজের অনেক কাছের বন্ধুদের ভালো কিছু সহ্য করতে পারি না, কিংবা কেউ ভালো কিছু করার চেষ্টা করলেও তাকে টেনে নামানোর চেষ্টায় থাকি সব সময়। যখন এই কাজটাও পারি না তখন নিজেকে প্রায় তুচ্ছ মনে হয় আর বারবার মনে হতে থাকে ও কেনো পারলো আমি কেনো পারলাম না ।

আমাদের মানব চরিত্রের অন্যতম দুটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অন্যের ভালো হলে নিজে অনুপ্রাণিত হয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করা কিংবা ওই একই কারণে নিজেকে তুচ্ছ বা ছোট মনে করা। তবে এক্ষত্রে দ্বিতীয় দিকটি কিন্তু মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায় নিমিষেই। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করতে যাওয়া সবচেয়ে বড় বোকামি কারণ সৃষ্টিকর্তা কাউকে কে এক ভাবে তৈরি করেন নি। প্রতিটি মানুষের মাঝে এমন কিছু যোগ্যতা, দক্ষতা আছে যা একে অন্যের থেকে ভিন্ন। তাই নিজেকে জানা এবং নিজের সাথে নিজেকে তুলনা করটাই সবচেয়ে শ্রেয়। পৃথিবীতে আজ সেই সব ব্যক্তিরাই সফলতার শীর্ষে যারা নিজেকে যত আগে বুঝতে বা চিনতে পেরেছে তারা কিসে যোগ্য এবং ঠিক কোন কাজটা তার জন্য ভালো

অতীত নিয়ে পরে না থাকা: মানুষের মন কে সাধারণত উদ্যানের সাথেই তুলনা করা হয়। যদি আপনি মনের যত্ন নেন এবং উদ্যানের মত প্রতিনিয়ত তার পরিচর্চা করেন তবে তা আপনার প্রত্যাশার অধিক ফলন দেবে। কিন্তু আপনি যদি আপনার মনে আগাছা গজাতে দেন তবে মনের শান্তি এবং তার ভেতরের ঐকতান আপনাকে সবসময় এড়িয়ে চলবে।

এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ করা যাক, মানুষই প্রতিদিনই তাদের মনের উদ্দ্যানের উর্বর জমিতে বিষাক্ত ময়লা আবর্জনা ফেলে; দুশিন্তা, উৎকন্ঠা, অতীতের ঘটনার জন্যে পীড়া অনুভব করা, প্রতিহিংসা এবং নিজের তৈরিকৃত ভীতিতো রয়েছেই যা আমাদের কে প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মানুষের মনের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ষাট হাজার চিন্তা দৌড়াদৌড়ি করে আর এসব চিন্তার ভিতর শতকরা ৯৫ ভাগ চিন্তাই একক ধরনের যা তার আগের দিনও সে ভেবেছিল। ভাল কিছু করার জন্যে ভাল চিন্তা করার পরিবর্তে আমরা বন্দী হয়ে থাকি অতীতের সেই বেড়া জালে। তাই জীবনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে এই বিষয় গুলোকে ঝেড়ে ফেলা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নেতিবাচক প্রভাবমুক্ত থাকুন: ও তো বেশি দূর যেতে পারবে না, তোমাকে কে দিয়ে আসলেই কিছু হবে না: প্রতিনিয়ত এই কথাগুলো আমাদের মাঝে মাঝেই শুনতে হয় আর এগুলো কথাই যেন অনেক সময় জীবনকে থমকে দেয়। আমাদের জীবনে কোন কাজই কঠিন না, বরং আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের সবলীল জীবন ও কাজগুলোকে অনবরত বাধাগ্রস্থ করে। আপনি তখনই জীবনে ভালো থাকতে পারবেন যখন সেই সব মানুষ গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে আপনার কাজগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেবেন। যা আপনাকে সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে আরো একধাপ।

আমাদের আশেপাশে এমন অনেকে আছে যারা অন্যের দোষ নিয়ে খোঁচা দিতেই ভালোবাসে। আপনার আশেপাশে পাশের মানুষ যারা অহেতুক সারাক্ষণ আপনার দোষ ধরে এবং আপনাকে ছোট করে তাদেরকে এড়িয়ে চলুন। কেননা এধরণের মানুষগুলো আপনার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই কে কি বলবে তা না ভেবে সব সময় নিজের ভালো দিক গুলো খুঁজে বের করুন।

নিজের এই সমস্যা, ওই সমস্যার চিন্তা করা বাদ দিয়ে ভেবে দেখুন আপনার মাঝে কী কী ইতিবাচক গুন আছে যা মানুষের কাছে প্রশংসিত কিংবা আপনাকে প্রকাশ করে আর এভাবে প্রতিনিয়ত নিজের ইতিবাচক গুনগুলো খুঁজলে একটা সময় নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। তবে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ করলে দেখা যায় আমরা অনেকেই আছি যখন ডিপ্রেশনে ভুগি আর ঠিক সেই সময়গুলোতে কেন যেন নেতিবাচক মনের মানুষগুলোর সাথেই বেশি দেখা হয়ে যায়।

এই নেতিবাচক মানুষগুলোর কথায় আশার আলো পাওয়া তো যায়ই না, বরং তাদের সমালোচনার চোটে হতাশা কাটিয়ে ওঠার আশাগুলোও হারিয়ে যেতে থাকে। সবকাজেই যে সবসময় সফল হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু, ব্যর্থতাগুলো মেনে নিয়ে, আমাদের প্রাপ্তিগুলোর দিকেই যদি বেশি মনোযোগ দেই তবে কাজ করার ইচ্ছাশক্তি আমাদের মাঝে জন্ম নিবে। আমাদের নিজের শক্তিগুলো জানতে হবে এবং সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তাই লোকে কি বলবে তা না ভেবে, নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে, বরং সেগুলো কীভাবে দূর করা যায় সেদিকে মনোযোগী হওয়া যায় তাই আমাদের জন্যেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেননা গোলাপকে আজ থেকে কেউ পটল বলে ডাকলে গোলাপ তার সুবাস বা মাধুর্যতা ছড়ানো বন্ধ করবে না।

তাই করুন যা আপনি করতে ভালবাসেন: শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যে নিহিত আছে প্রকৃত মহত্ব। আর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্যে আত্নউন্নয়ন একজন মানুষের জীবনে হতে পারে সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আপনি যদি আপনার জীবনের উন্নতি ঘটাতে চান এবং আপনার প্রত্যাশিত স্বপ্নের চূড়ায় উঠতে চান তবে নিজের দৌড় নিজেকেই দৌড়াতে হবে। অন্যরা আপনাকে কী বলল সেটার থেকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ আপনি নিজেকে কি বলছেন।

আপনি যে কাজটি করতে চান সেই কাজ যদি আপনার মন ও বিবেকের কাছে সঠিক হয় তবে সেই কাজটি হতে পারে আপনার জীবনের পথ চলার সঙ্গী। খুব সাধারণ ভাবে যদি বলতেই হয় আপনি জীবন ব্যাপি যে লক্ষ্য অর্জন করতে চান হতে পারে তা— বস্তুগত, মানসিক, শারীরিক বা আধ্যাত্মিক যাই হোক না কেন জীবনের দিনগুলো সেই কাজটির জন্যেই ব্যয় করুন যা আপনার মন বলে। তবে অবশ্যই নিজের লক্ষ্য সস্পর্কে নিশ্চিত হয়েই বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে যা আপনাকে শেষ পর্যন্ত জয়ের স্বাদ দিবেই। নিজের ইচ্ছা, অনিচ্ছা ও মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করুন সবসময়। তবে সবকিছুই যে আমরা লাভের জন্য করবো এমনটা কিন্তু নয়।

এমন অনেক কাজ রয়েছে যা করলে আমাদের লাভ কিংবা ক্ষতি হয় না কিন্তু তারপরেও আমরা সেগুলো করতে ভালোবাসি কেননা ভাল লাগার কাজটির প্রতি থাকবে আপনার অন্যরকম অনুপ্রেরণা, এবং সেই অনুপ্রেরণাই যোগাবে আত্মবিশ্বাস।

নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন: “Each time we face our fear, we gain strength, courage, and confidence in the doing” – Theodore Roosevelt নিজেকে বিশ্বাস করুন, জীবনের প্রতি সদয় হলে আপনি সারা জীবন সুখে থাকতে পারবেন। আর এ কারনে জীবনের সর্বোচ্চ অর্জনের জন্য নিজের অতি ক্ষুদ্র সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গকে শিখায় পরিণত করতে হবে।

সফলতার গোপন সূত্রটি হলো “আত্মবিশ্বাস” আর আপনি যে সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেটি আসবে শুধুমাত্র আপনার মূল্যবান উদ্দেশ্যের প্রতিফলন এবং নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। এতে করে আপনি নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারবেন যা আপনাকে পরবর্তীতে জীবনে চলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে আর আপনার পজিটিভ ভাবমূর্তি আপনাকে প্রতিনিয়ত উৎফুল্ল রাখবে।

একটা সহজ কথা বুঝার চেষ্টা করুন এই পৃথিবীতে আপনার বেঁচে থাকাটা কত সৌভাগ্যের একটা বিষয়। আপনি নিজেকে যত ক্ষুদ্রই মনে করুন না কেন, আপনার একটা শৈশব আছে, কৈশোর আছে, এবং আপনার জীবনেও এমন অনেক মুহূর্ত আছে যা অন্য কারো নেই, এমন অনেক অর্জন, দক্ষতা আপনার ঝুলিতে আছে যা অন্যদের নেই।

জ্ঞানের পরিধি বাড়ান: যতো উদ্দীপনা থাক, দেশপ্রেম থাক এবং প্রতিশোধের আগুন যতোই দাউদাউ জ্বলুক, বন্দুক চালাতে না জানলে বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ করা যায় না ঠিক তেমনি নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে না পাড়লে সাফলতার পথ খুঁজে পাওয়াটাও অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

আপনি যদি আপনার লক্ষ্য দেখতে না পারেন তবে তা কখনো অর্জন করতে পারবেন না আর লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই লক্ষ্য সম্পর্কে প্রচুর পরিমাণে জ্ঞান লাভ করা। আর আপনি যদি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়তে চান এক্ষেত্রে কিন্তু আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো জ্ঞান অর্জন করা। জীবনে চলার পথে আপনার জ্ঞানের পরিধি যত বাড়বে ততই আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, আর তা কেবল মাত্র আপনি আপনার জ্ঞান গবেষণা আর অধ্যায়নের মাধ্যমে বাড়াতে পারেন।

শুধুমাত্র কতটুকু কাজ করলাম, কতটুকু সুযোগ সুবিধা পেলাম এবং কতটুকু উপার্জন করলাম- এতে সীমিত থাকা উচিতনা ক্রমাগত নিজ অবস্থান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যেতে হবে আর এক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নেই।

আপনি হয়ত সবসময় ভবিষ্যতবাণী করতে পারবেন না, অথবা সব কিছু সব সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে তাও না তবে ফলাফল যাই হোক না কেনো আপনার আত্মবিশ্বাস আপনাকে নিয়ে যেতে পারে সফলতার পাহাড়ের চূড়ায়।

লেখক: আব্দুল্লাহ আল শিহাব, তথ্যসূত্র: স্পাইক স্টোরি ডটকম।

More News Of This Category