তাহমিনা শারমিন রুমকী চ্যানেল আই এর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। তার আগে দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন কর্পোরেট হাউজ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হেড অব মিডিয়া, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস হিসেবে। তবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ২০০৬ সালে ইন্টারস্পিড অ্যাড এজেন্সিতে একটা পার্ট টাইম চাকরির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ১২ বছরের চাকরি ক্যারিয়ার তার। আর এই ১২ বছরেই তিনি কাজের মাধ্যমে অবস্থান করছেন সফলতার শীর্ষে। নারী দিবসে সে সফলতার গল্প ও তার পেছনের গল্প শুনিয়েছেন রুমকী। ‘ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক করেছি। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়া অবস্থায় পারিবারিক কারণে বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়িতে আমার তেমন কোনো কাজের চাপ ছিলনা।
বেশিরভাগ সময়ই কাটতো টিভি দেখে। এরমধ্যে ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবী এয়ার হোস্টেস হিসেবে চাকরিতে যোগ দেয়। তখন থেকেই নতুন ভাবনার শুরু। বাসায় বসে থাকার চেয়ে একটা চাকরি করলে তো মন্দ হয় না! স্বামীকে বলতেই তিনি রাজি হলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ইন্টারস্পিড অ্যাড এজেন্সিতে একটা পার্টটাইম জবের খোঁজ দিলেন। ভাইভা দিলাম, চাকরিটা হয়ে গেল। সময়টা ২০০৬ সাল। বেতন পেতাম ছয়হাজার টাকা।’
এভাবেই নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর গল্প বলছিলেন আজকের সফল নারী তাহমিনা শারমিন রুমকী। শুরুর দিকে রুমকী কোন অফিশিয়াল কাজ পারতেন না। সহকর্মীরা সবাই যে যার মতো ব্যস্ত থাকতো। তাকে কাজ শেখানোর সময় নেই কারো কাছে! প্রথম প্রথম তো অফিসের কাগজপত্রও তাকে দিতে নিরাপদ মনে করতো না অফিস।
তারপর একদিন ফেলে দেয়া কাগজপত্র থেকে কয়েকটি নিয়ে নিজে নিজেই শেখার চেষ্টা শুরু করলেন। সমস্যা হলেই সমাধান চাইতেন পাশের সহকর্মীর কাছ থেকে। আর কাজ শিখতেন একটু বুদ্ধি করে। যেমন সহকর্মীদের পাশে বসে আড্ডার ছলে তাদের কাজ দেখতেন তিনি। সেখান থেকে শিখতে চেষ্টা করতেন। তখনই চাকরিটা অস্থায়ী তার।
তাহমিনা শারমিন রুমকীর চাকরি স্থায়ী হওয়ার ঘটনা বেশ মজার। একদিন জরুরি প্রয়োজনে এক সহকর্মীর ছুটির প্রয়োজন হলো। কিন্তু কাজের চাপে তিনি ছুটিতে যেতে পারছেন না। তার কাজটা রুমকী করে দিলেন। বসের কানে গেলো সে খবর। কাজ দেখেই পরের দিন এলো বসের ডাক। ভয়ে ভয়ে বসের রুমে গিয়ে জানতে পারলেন, পূর্ণকালীন জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে অফিস। বেতনও বেড়ে গেল। তারপর ২০০৯ সালে পদোন্নতি পেলেন প্ল্যানার অ্যান্ড অ্যানালাইসিস হিসেবে।
২০১০ সালের দিকে হঠাৎ প্রাণ থেকে একটি ফোন পেলেন রুমকী। ফোনেই তারা চাকরির প্রস্তাব দেন। অথচ তিনি কোথাও চাকরির আবেদন করেননি। প্রথমে না বলেছিলেন তবে স্বামী ও ইন্টারস্পিডের কয়েকজন সহকর্মীর অনুপ্রেরণায় প্রাণে ইন্টারভিউ দিলেন। চাকরিটা হয়ে গেলো। পদ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মিডিয়া প্ল্যানিং।
সেখানে সাধারণত ছয় মাসের আগে চাকরি স্থায়ী করা হয় না। মজার ব্যাপার হলো, দেড় মাসের মধ্যে চাকরিই স্থায়ী করা হলো রুমকীর। এরপর শুধুই সাফল্য! দায়ত্বি পালন করেছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হেড অব মিডিয়া, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস হিসেবে।সেখানে তার চাকরিজীবন ছয় বছরের।
বলে রাখা ভালো, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগের কাজ হলো গবেষণা করে নতুন নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্যই থাকে পণ্যের প্রচার ও বিক্রি বাড়ানো।এখন তাহমিনা শারমিন রুমকী চ্যানেল আই এর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক।সেখানে তিনি যোগ দিয়েছেন ২০১৭ সালের জুনে।
নিজের এই সফলতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে রুমকী বলেন, কাজ শেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে। কাজটা যে রকমই হোক, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ফাঁকি দেওয়ার মানসিকতা থাকলে জীবনে এগোনো সম্ভব নয়। নিজের কাজ সম্পর্কে আরো বেশি জানার জন্য প্রচুর পড়তে হবে। সহকর্মীদের কাছ থেকে অনেক শেখার আছে। শেখার আগ্রহ, দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আর কর্মনিষ্ঠা থাকলে জীবনে সফল হওয়া সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, নিজ কর্মস্থলে যেমনভাবে দায়িত্ব পালন করি, একজন নারী হিসেবে পরিবারের প্রতিও দায়বদ্ধতা থাকে। আমার মা-বাবা ছাড়া আমি একেবারেই অর্থহীন। সত্যিকার অর্থে, মা-বাবার সহযোগিতা ছাড়া যেকোনো কর্মজীবী নারীর জন্যই অফিস ও ঘর সামলানো কঠিন।
মা-বাবা, স্বামী, শ্বশুর শাশুড়ি আমার একমাত্র সন্তান কাশিফ আহমেদ রায়ান আমার ক্যারিয়ার গড়তে অনেক বেশি সাপোর্ট করেছে। এছাড়া সহকর্মীদের সহযোগিতা ছাড়া হয়তো এতদূর আসা সম্ভব হতো না আমার পক্ষে। আরো একটা কথা না বললেই নয়, আমি কাজটাকে আমার পরিবারের একটা অংশ মনে করেছি সবসময়, সেজন্য সফলতা পেয়েছি। তথ্যসূত্র: কালেরকন্ঠ।