1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

কাট্টলী বিলে কী নেই যা আপনাকে মুগ্ধ করবেনা!

দীঘিনালা থেকে সকাল নয়টায় শুরু হলো রাঙামাটির লংগদু উপজেলার উদ্দেশে যাত্রা। এক ঘণ্টার পথ। তাই আগেই বন্দোবস্ত করা হয়েছিল একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। লংগদুর হাসপাতাল ঘাটে অপেক্ষায় ছিল নৌকাটি। সে নৌকায় শুরু হলো আমাদের কাট্টলী যাত্রা। সঙ্গীরা কেউ নৌকার ছইয়ের ওপর আর কেউ নৌকার ভেতরে বসে পড়ল। আড্ডা জমতে সময় লাগল না।

মুহূর্তেই সে আড্ডা রূপ নিল হইহুল্লোড়ে। কাপ্তাই হ্রদের গভীর জলরাশির বুক চিরে ছুটে চলেছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। কিছু দূর যেতে আবুলের টিলায় চোখে পড়ল শিকারের অপেক্ষায় মাচাংয়ে বসে আছে অনেক পানকৌড়ি। হ্রদে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরায় মগ্ন জেলেরা।

আবুলের টিলা পেরিয়ে ফোরামুখ যেতেই একঝাঁক পাখি নৌকার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে নামল লেকের পানিতে। তারপর নৌকার ঢেউয়ে দোল খেতে খেতে ইচ্ছেমতো ভেসে বেড়াল।

সূর্য তখন পুবের আকাশে। তার আলো হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে পড়ে অন্য রকম রং পেয়েছে। রোদ-পানির মিতালি দেখতে দেখতে চলে আসি বৈদ্যের টিলায়। সেখানেও শামুকখোলের দল জায়গা করে নিয়েছে। হ্রদের মধ্যে জেগে ওঠা ছোট ছোট টিলায় মাছ শিকারের জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে তারা।

ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির তো ওড়াউড়ি আছেই। সেসব পাখির ঝাঁক দেখে নৌকাবাসীরা সবাই উল্লসিত হয়ে ওঠে। আবার হ্রদের মধ্যখানে জেলে নৌকাগুলো লেকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দু–তিনটি নৌকা একসঙ্গে করে জেলেরা জাল টানছেন।

ভ্রমণসঙ্গী আরমান খান জানালেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পাখি এসেছে। আগে শিকারিদের উৎপাতের কারণে কয়েক বছর পাখি আসেনি। কিন্তু প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে এখন শিকারিরা পাখি শিকারের সুযোগ পান না।

কথা বলতে বলতেই পৌঁছে গেলাম কাট্টলী দ্বীপে। চারদিকে লেকের পানিবেষ্টিত কাট্টলী। দূর থেকে অপরূপ সুন্দর লাগে। কাট্টলীতে নৌকা ভিড়তেই নাকে এলে শুঁটকির গন্ধ। কাট্টলী বিলের পাড়ে শিকার করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সারি সারি শুকাতে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন শিশু বাড়ির সামনে মাচাংয়ের ওপর শুকাতে দেওয়া শুঁটকি নাড়াচাড়া করছিল।

কাট্টলীর জেলে আবদুল মজিদ জানালেন, এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দার প্রধান পেশা মাছ শিকার। এই মৌসুমে তাঁরা মাছ ধরে শুঁটকি করেন। উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরের দ্বীপ হওয়ায় সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি হলো। নৌকায় ওঠার আগে কিছু শুঁটকিও কিনে ফেললাম। ফেরার সময়ও সেই একই দৃশ্য, যতই দেখি চোখের স্বাদ যেন মেটে না।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে দীঘিনালার উদ্দেশে বেশ কয়েকটি নৈশকোচ ছেড়ে আসে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত চেয়ারকোচও আছে। রয়েছে ঢাকা থেকে রাঙামাটির লংগদু পর্যন্ত সরাসরি নৈশকোচ। চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকা থেকে শান্তি পরিবহনের চেয়ারকোচ আসে। ভাড়া তেমন বেশি নয়।

দীঘিনালা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ট্যুরিস্ট ক্যাম্পে একটু বিশ্রাম নিয়ে কয়েকজন লংগদুর গাড়িতে বা গাড়ি রিজার্ভ করে লংগদু যাওয়া যায়। জিপ, পিকআপ রিজার্ভ ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা নিতে পারে। লংগদু থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা আসা-যাওয়া ১ হাজার ৫০০ টাকা নেবে। আর স্পিডবোটে গেলে ৩ হাজার টাকা।

কোথায় থাকবেন
লংগদুর কাট্টলী বিল থেকে দিনে গিয়ে দীঘিনালায় আবার দিনে ফিরে আসা যায়। ইচ্ছা করলে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে আবাসিক হোটেলে থাকতে পারেন। জেলা শহরে অনেক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট রয়েছে। আর দীঘিনালাতেও ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভাড়া সাধ্যের মধ্যে।

সতর্কতা
লংগদু থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি না ওঠাই ভালো। খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন কাপ্তাই লেকের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ বা বর্জ্য না ফেলা হয়। অতিথি পাখিদের বিরক্ত না করলে পাখির বিচরণ অনায়াসেই অবলোকন করা যাবে। তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।

More News Of This Category