1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

পড়তে চাইলে ডেন্টাল সার্জারি!

দীর্ঘ ১২টি বছর স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটতে হয়েছে একেকজন শিক্ষার্থীকে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের পর এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ভর্তিযুদ্ধ। অনুষ্ঠিত হয়েছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। তাই স্বপ্নের সমান নিজেকে বড় করতে চাইলে প্রস্তুতিটা হওয়া চায় সেরকমই। ডেন্টাল সার্জারিকে যারা পেশা হিসেবে নিতে চান জেনে নিন তার আদ্যোপান্ত।

সরকারি ডেন্টাল কলেজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্রে বছরে একটি ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে মেধা তালিকার ক্রমানুসারে ছাত্র ভর্তি করানো হয়। বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলোতে সম্মিলিতভাবেও একটি ভর্তি পরীক্ষা হয়। এটিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়। উত্তীর্ণ মেধা তালিকার ক্রমানুসারে বিভিন্ন বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

সরকারি ডেন্টাল কলেজ মাত্র ৯
সরকারি হিসাব মতেই দেশে সরকারি ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ৯টি। সরকারি পর্যায়ে এসব কলেজে আসন সংখ্যা মাত্র বিডিএস-৫৩২টি।অপরদিকে বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ ২৪টি। এর মধ্যে ঢাকা ডেন্টাল কলেজটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী ডেন্টাল কলেজ দুটি চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

চাহিদার কারণে এখন দেশে বেশ কিছু বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে ঢাকায় ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ, বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ, সিটি ডেন্টাল কলেজ, সাপ্পোরো ডেন্টাল কলেজ এবং ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ইনটারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ, রাজশাহীর উদয়ন ডেন্টাল কলেজ, রংপুর ডেন্টাল কলেজ উল্লেখযোগ্য। এই বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় সর্বোচ্চ সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা।

বিডিএস এখন ৫ বছর
ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) পড়ার সময়কাল এখন ৫ বছর বছর। আগে যা ছিল ৪ বছর। সঙ্গে ইন্টার্নি এক বছর। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বিডিএসের সময়কাল পাঁচ বছর। আর নেপালে পড়তে চাইলে লাগবে সাড়ে পাঁচ বছর। বাংলাদেশের বিডিএসে পড়াশোনা আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় প্রতিবছর অসংখ্য বিদেশি ছাত্র এ দেশের সরকারি ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলোতে পড়তে আসেন। তাই সরকারিভাবেই প্রতিটি ডেন্টাল কলেজে বিদেশি ছাত্রদের জন্য আলাদা কোটাও রাখা হয়েছে।

পছন্দের তালিকায় চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ
চট্টগ্রামে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ (সিআইডিসি) এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বহদ্দারহাট চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন শমসের পাড়ায় দেড় একর আয়তনজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা ৬৫। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন।

৫০টি ডেন্টাল ইউনিট বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে সকল শ্রেণির মানুষকে সাধ্যের মধ্যে দাঁত ও মুখ গহ্বরে রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী, সুবিশাল ক্যাম্পাস, মনোরম পরিবেশ, তুলনামুলক কম টিউশন ফি, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ল্যাব এই ডেন্টাল কলেজকে দিয়েছে অনন্যতা।

উচ্চশিক্ষা
দেশে ও দেশের বাইরে দুই জায়গায়ই ডেন্টাল সার্জারির ওপর উচ্চতর শিক্ষা নেওয়া যায়। ডেন্টালের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চাইলে আপনি পিএইচডি করতে পারেন। পিএইচডি শেষ করতে সময় লাগবে তিন বছর। আছে এফসিপিএস (ফেলো অব কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন), সময় লাগবে তিন থেকে পাঁচ বছর। দেশে ও দেশের বাইরে দুই জায়গায়ই এই ডিগ্রি নেওয়া যায়।

দেশে এফসিপিএস করা যাবে মহাখালীর বিসিপিএসে। করতে পারেন এমএস (মাস্টার্স অব সার্জারি)। ডেন্টালের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এমএস করা যায়। ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস করতে সময় লাগবে তিন থেকে পাঁচ বছর। এমডিএস (মাস্টার্স অব ডেন্টাল সার্জারি) দেশে ও দেশের বাইরে শেষ করতে সময় লাগবে তিন বছর। চাইলে এমসিপিএস করতে পারেন (মেম্বার অব কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস)।

বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে চালু আছে কোর্সটি। আর বিডিপিএইচ করতে চাইলে যেতে হবে ইংল্যান্ডে। এমপিএইচ (মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ) অবশ্য পড়া যায় দেশে ও দেশের বাইরে দুই জায়গায়ই। এ ছাড়া চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষে করতে পারেন ডিডিএস (ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল সার্জারি)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্সটি করতে সময় লাগবে এক বছর।

বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের মুখের রোগ। সচেতনতাও বাড়ছে। দাঁত কিংবা মুখের যেকোনো সমস্যায়ই এখন মানুষ দ্রুত দাঁতের ডাক্তারের কাছে চলে আসে। সত্যি কথা বলতে কি, এ দেশে এই পেশাটা অত্যন্ত সম্ভবনাময়। প্রয়োজনের তাগিদে এই পেশার জনপ্রিয়তাও বাড়ছে দিন দিন। এ দেশেও চাকরির বাজারে ডেন্টাল সার্জনদের রয়েছে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা।

বিসিএস হেলথের মাধ্যমে সরাসরি চাকরির সুযোগ থাকছে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন হেলথ ইনস্টিটিউটে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি হাসপাতালগুলোয় দাঁতের সেবার চাহিদার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের ডেন্টাল সার্জনদের বড় একটা অংশ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব চেম্বারে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। তাই বেকারত্বের শঙ্কাটা থাকছে না একেবারেই।

উন্নত পৃথিবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মুখ ও দাঁতের সমস্যা। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মুখের প্রায় ২৬৩ রকমের রোগ আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে আবিস্কৃত হয়েছে রোগ সৃষ্টিকারী নতুন নতুন সব অণুজীব। এর প্রতিরোধে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই শাখাও আজ যথেষ্ট উন্নত। দেশে ও দেশের বাইরে এ বিষয়ে পড়ার ব্যাপক সুযোগের পাশাপাশি আছে বিশাল চাকরির বাজার। তাই ভর্তিযুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন এখন থেকেই।

More News Of This Category