আমাদের এসএমই খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কিছু বিষয়ে নজর দেয়ার বিকল্প নেই। সবার আগে অর্থায়নের সমস্যা দূর করতে হবে। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা অর্থায়নের অভাবে কাঙ্ক্ষিত পণ্য উৎপাদনে যেতে পারে না। আবার বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলেও তার সুদের হার থাকে অনেক বেশি; যা এসএমই বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার পক্ষে বহন করা কঠিন।
এছাড়া এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে কম সুদের নির্দেশনা থাকলেও তথ্যের অভাবে এবং সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে না পারার কারণে সে সুযোগ কাজে লাগানো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য সম্ভব হয়ে ওঠে না। এরপর যে বিষয়টি সামনে আসে তা হল কীভাবে এসএমই বাড়ানো ও তাদের টেকসইভাবে ধরে রাখা যায়।
এক্ষেত্রে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি সামনে রেখে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। যেমন- বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্য প্যাকেট, কার্টুন ও পলি ইত্যাদি তৈরিকে কেন্দ্র করে এসএমই খাত বিকশিত হতে পারে। সুনির্দিষ্ট শিল্প খাতের ক্ষেত্রে, যাকে লিঙ্কেজ ও ব্যাকআপ শিল্প বলা হয়, সাপ্লাই চেইনকে ফোকাস করে নীতিমালা তৈরি করে এসএমই খাতকে এগিয়ে নেয়া যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইনে এসএমই’র অবদানের একটি সীমারেখা বেঁধে দেয়া যায়। যেমন- সুনির্দিষ্ট একটি পণ্যের উৎপাদনে বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি এসএমই’র জন্য একটি অংশ নির্ধারণ করে দেয়া যে, সাপ্লাই চেইনে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ অবদান তাদের দখলে থাকবে। এভাবে এসএমইকে সুরক্ষা দেয়া যায়।
এখন মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগ। আমরা চাইলেও একে এড়িয়ে চলতে পারব না। কাজেই মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে এসএমই খাতকে সুরক্ষা দিতে হবে। এসএমই খাত যেসব পণ্য উৎপাদন করে সে ধরনের পণ্যের আমদানি কর বাড়িয়ে, এসএমইকে কর রেয়াত দিয়ে, সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।
এর বাইরে কার্যকর আরেকটি কাজ করা যায়, যা হল বৃহৎ শিল্প কোন প্রডাক্ট তৈরি করবে এবং ক্ষুদ্র শিল্প কোন পণ্য তৈরি করবে তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া। একে পার্টিকুলার প্রডাক্ট গ্রুপ ও পার্টিকুলার প্রডাক্ট লেন্থ বলা হয়। অনেক দেশে নিজস্ব শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য এমন নীতি চালু আছে। জাপানে তো আছেই; থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশেও এমনটি করা হয়।
এসএমই’র ক্ষেত্রে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হল ক্যাম্পিং। যেমন- আমাদের ইনোভেশনের জায়গা একেবারেই দুর্বল। থাইল্যান্ডে এসএমই’র প্রসারে এবং এসএমই পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনেক ল্যাব রয়েছে। ভারতে রয়েছে অনেক রিচার্স সেন্টার; কিন্তু আমাদের এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া প্রযুক্তিতে আমরা পিছিয়ে আছি।
ছোট ছোট মেশিন-টুলসের ব্যবহারের মাধ্যমে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পণ্যের উৎপাদন অনেক বাড়িয়ে তুলতে পারেন; কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় সবকিছুই হয় ম্যানুয়ালি। তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাক্ট ডেভেলপ করার কোনো সেন্টারও আমাদের নেই। প্রডাক্ট ক্যাপাসিটি বাড়ানো, বিজনেস প্ল্যান ঠিক করা, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস ইত্যাদিতে জোর দেয়ার মাধ্যমে এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। মো. রাশেদুল করিম মুন্না : পরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশন; ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড। তথ্যসূত্র: যুগান্তর।