1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

মসলিন ফিরে পেতে নতুন প্রকল্প!

সেই ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন আবার ফিরে আসবে। দেশের তাঁতিরা মসলিন কাপড়ের মিহি বুননে শৈলী ফুটিয়ে তুলবেন। মসলিন আবারও জনপ্রিয় হবে, ফিরে আসবে সোনালি ঐতিহ্য। এই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। এ জন্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধারে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি পাসও করা হয়েছে। মসলিনকে ফিরে পেতে তাঁত বোর্ডের নেওয়া এই প্রকল্পের খরচ অবশ্য খুব বেশি নয়—মাত্র ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এটি মূলত একটি বিনিয়োগ বা গবেষণা প্রকল্প। এতে মসলিনের প্রযুক্তি উদ্ধার করা হবে।

পুরো প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় মূলত মসলিন কাপড় তৈরির জন্য তুলাগাছ লাগানো হবে। পরে সেই তুলা থেকে সুতা তৈরি করে মসলিন কাপড় বানানো হবে।

তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা আরও জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ইতিমধ্যে মসলিন কাপড় তৈরির উপযোগী সুতা তৈরির জন্য কিছু তুলাগাছ লাগানো হয়েছে। সেসব গাছে ফুলও ধরতে শুরু করেছে। এরপর তুলা সংগ্রহ করে নমুনা হিসেবে সুতা ও কাপড় তৈরি করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁত বোর্ডের গবেষণা কর্মকর্তা (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মতিউর রহমান বলেন, ‘একসময় এ দেশের তাঁতিরাই মসলিনের সুতা ও কাপড় বুনতেন। এটি ছিল তাঁদের নিজস্ব প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তি হারিয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সেই প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এরপর থেকে আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন সূত্র থেকে সুতার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন রাজশাহীতে যে তুলাগাছ লাগানো হয়েছে, সেটির ফলাফল কী আসে, তা দেখার অপেক্ষায়।

তাঁত বোর্ডের প্রকল্প প্রস্তাবটি ঘেঁটে দেখা গেছে, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য তিনটি। প্রথমত, নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে মসলিনের সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার; দ্বিতীয়ত, পরীক্ষামূলকভাবে মসলিনের সুতা ও কাপড় তৈরি এবং তৃতীয়ত, বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার।

এ প্রকল্পের আওতায় মসলিনের তুলা, সুতা ও কাপড় বানানোর প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তাঁত বোর্ড।
এ প্রকল্পের আওতায় মসলিন সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি বিষয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁতিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু এলাকার তাঁতিদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এলাকাগুলো হলো ঢাকার ধামরাই; মানিকগঞ্জ সদর ও শিবালয়; টাঙ্গাইলের নাগরপুর, ভূঞাপুর ও মধুপুর; গাজীপুরের কাপাসিয়া; নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ; নরসিংদী সদর ও পলাশ; ময়মনসিংহ সদর; কুমিল্লার চান্দিনা; বান্দরবান সদর; খাগড়াছড়ি সদর; রাঙামাটি সদর; রাজশাহী শহর ও যশোর সদর।

মসলিন বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যের প্রতীক। মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা, গ্রিক পর্যটক পিনটনি, টেইলর, উরে প্রমুখ তাঁদের লেখায় বাংলার মসলিনের বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন ধরনের সুতি বস্ত্রের মধ্যে ঢাকার মসলিন বা ঢাকাই মসলিনের সুখ্যাতি ছিল পৃথিবীব্যাপী। ফুটি কার্পাস নামের তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি হতো।

প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে, মসলিন বস্ত্র প্রাচীনকাল থেকে প্রচলন থাকলেও ঢাকাই মসলিন মোগল আমলে প্রসিদ্ধ হয়। মোগল আমলে ঢাকাই মসলিন দেশ-বিদেশে প্রায় একচেটিয়া বাজার দখল করে। ১৭৯৮ সালে প্রকাশিত জেমস টেলরের ট্রপোগ্রাফি অব ঢাকা বইয়ে ঢাকাই মসলিন রপ্তানির বিষয়টি ছিল। সতেরো শতকের প্রথম দিকে পর্তুগিজরা মসলিনের ব্যবসা করত।

ওই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে অন্য ইউরোপীয় বণিক, যেমন ওলন্দাজ ও ফরাসি কোম্পানি ঢাকা শহরে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। তারাই মসলিনের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন যুগের সূচনা করে। ইংরেজ কোম্পানি আমলে মসলিনশিল্পের অবনতি হয়। একপর্যায়ে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো।

More News Of This Category