1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

মুখ থুবড়ে পড়েছে মেঘনা ব্যাংকের ‘ট্যাপ এন পে’ জামানতের টাকা নিয়ে সমস্যায়

বেশ হাঁকডাক দিয়ে ২০১৭ সালের মার্চে মেঘনা ব্যাংক এনেছিল মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘ট্যাপ এন পে’। উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল, চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সেবা দেবে এ মোবাইল ব্যাংকিং। ‘মোবিলিটি আই ট্যাপ পে (বাংলাদেশ) লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে সেবাটি চালু করে মেঘনা ব্যাংক। কিন্তু দুই বছর পেরোনোর আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘ট্যাপ এন পে’র কার্যক্রম।

কার্ডভিত্তিক এ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অর্থলগ্নি করে বিপদে পড়েছেন দেড় শতাধিক বিনিয়োগকারী। ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা জামানত দিয়ে ‘পার্টনার ডিস্ট্রিবিউটর’ বা পিডি হয়েছিলেন তারা। কিন্তু লাভবান হওয়া দূরে থাক, লগ্নিকৃত টাকাই ফেরত পাচ্ছেন না তারা। জামানতের প্রায় ৪০ কোটি টাকা মেঘনা ব্যাংকের কাছে আটকে আছে বলে বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন।

পাওনা টাকা ফেরত পেতে এরই মধ্যে মেঘনা ব্যাংক ও মোবিলিটি আই ট্যাপ পে (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেছেন পার্টনার ডিস্ট্রিবিউটররা। এসব বৈঠকে দুটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নতুনভাবে ব্যবসা শুরুর আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে পিডিদের বড় অংশই ‘ট্যাপ এন পে’র সঙ্গে ব্যবসা করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ ৬ ও ৭ জানুয়ারি পিডিদের সঙ্গে মেঘনা ব্যাংক ও মোবিলিটি আই ট্যাপ পে (বাংলাদেশ) লিমিটেডের বৈঠক হয়েছে।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন পিডি নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন কাছে। তবে তাদের কেউই নাম উদ্ধৃত করে বক্তব্য দিতে চাননি। গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিলে জামানতের টাকা ফেরত না পাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে একাধিক পিডি বলেন, ‘ট্যাপ এন পে’ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এজেন্টের উপরের স্তরে পিডি নিয়োগ দিয়েছিল। ২০-৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত দিয়ে তারা পিডি হয়েছেন। কথা ছিল, কার্ড বিক্রি করে কমিশনসহ জামানতের টাকা পর্যায়ক্রমে ফেরত পাওয়া যাবে।

প্রথম কয়েক মাস টাকা দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে কার্ড ও কমিশনের টাকা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। এক বছর ধরে ‘ট্যাপ এন পে’ ব্যবসায় স্থবিরতা বিরাজ করছে। এখন কমিশন কিংবা জামানতের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে না। এরই মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে তিন দফা বৈঠক হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, টাকা ফেরত কিংবা ব্যবসা সচল না করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে।

যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ায় ‘ট্যাপ এন পে’ সেবা সম্প্রসারণ করা যায়নি বলে মনে করেন মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন। তার মেয়াদেই আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ট্যাপ এন পে’ উদ্বোধন করা হয়েছিল। পর্ষদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে মেঘনা ব্যাংকের এমডি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটির ব্যর্থতার বিষয়ে মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মেঘনা ব্যাংকে ‘ট্যাপ এন পে’ চালু করা হয়েছিল। শুরুতে সেবাটির পিডি এবং এজেন্ট হওয়ার জন্য বাজারে প্রতিযোগিতা পড়ে গিয়েছিল। অনেকে তদবির করে পিডি হয়েছেন। সেবাটি দ্রুত বিস্তৃতিও লাভ করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটি থমকে গেছে।

তিনি বলেন, ব্যর্থতার জন্য মেঘনা ব্যাংক এবং মোবিলিটি আই ট্যাপ পে (বাংলাদেশ) লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সমানভাবে দায়ী। মেঘনা ব্যাংক সেবাটি সম্প্রসারণে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। আবার মোবিলিটি আই ট্যাপ পে কর্তৃপক্ষ ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যর্থ হয়েছে। পিডিদের একটি অংশ ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া জামানতের অর্থ ফেরত চাচ্ছে। দুই পক্ষ বসেই এটির সমাধান করতে হবে।

২০১৭ সালের ২০ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ট্যাপ এন পে’ সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে মেঘনা ব্যাংক। অনুষ্ঠানে বলা হয়েছিল, ‘ট্যাপ এন পে’ হচ্ছে একটি প্রিপেইড অ্যাকাউন্ট, যেখানে মোবাইল নম্বর হবে অ্যাকাউন্ট নম্বর। এনএফসি কার্ড ছাড়াও এনএফসি ব্রেসলেট, এনএফসি অ্যাপ সংবলিত অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ফিচার মোবাইল, এনএফসি ট্যাগড চাবির রিং, ওয়েব পোর্টাল সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেনের কথা জানানো হয়েছিল।

‘ট্যাপ এন পে’র সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, মোবাইল টপ আপ, টাকা ট্রান্সফার, বেতন-ভাতা প্রদান, বিল পেমেন্ট, ক্ষুদ্রঋণ, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম পেমেন্ট, টিকিট ক্রয়-বিক্রয়, শপিং, সরকারি কর প্রদান, সরকারি ভাতা-ভর্তুকি প্রদান, গিফট ভাউচার ইত্যাদি। কিন্তু দুই বছরেও প্রতিশ্রুত সেবাগুলোর বড় অংশই চালু হয়নি বলে জানা গেছে। ‘ট্যাপ এন পে’ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেজ রয়েছে। সেখানেও কমেন্টের মাধ্যমে পিডি, এজেন্ট ও গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন।

এ প্রসঙ্গে মোবিলিটি আই ট্যাপ পে (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কামরুল আহসান বলেন, ‘ট্যাপ এন পে’ অন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো ব্যবসা নয়। ভিন্ন ধারার মোবাইল ব্যাংকিং আমরা চালু করেছি। দেশে রেমিট্যান্স আনা, যে কোনো ধরনের বিল পরিশোধ, কর বা ফি পরিশোধের জন্য এ সেবাটি চালু করা হয়েছে।

বেশিদিন হয়নি আমাদের কার্যক্রম শুরু করার। সমস্যার কারণে ব্যবসার গতি কিছুটা শ্লথ ছিল। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা নব উদ্যমে কার্যক্রম শুরু করব। পুরনো অযোগ্য কর্মীদের ছাঁটাই করে দক্ষ ও যোগ্য দেখে নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। পিডিদের টাকা ফেরত না দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিডিদের কাছ থেকে আমরা কোনো টাকা নিইনি। জামানত হিসেবে তাদের কাছ থেকে মেঘনা ব্যাংক টাকা নিয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি ও লেনদেন করেছেন তারা। তাই টাকার বিষয়ে আমরা বলতে পারব না।

২০১৮ সালের এপ্রিলে মেঘনা ব্যাংকের এমডি হন আদিল ইসলাম। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সর্বশেষ বুধবার সন্ধ্যায় আদিল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের কোনো বিষয়ে আমি এভাবে কথা বলতে পারি না। মডার্ন কনসেপ্টে এটি যায় না। বক্তব্য জানতে ব্যাংকটির জনসংযোগ বিভাগে লিখিত আবেদনের পরামর্শ দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে মেঘনা ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাড়া দেননি।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে মোট ১৮টি ব্যাংক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সে হিসেবে সেবাটির মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। তবে এসব লেনদেনের প্রায় ৮২ শতাংশই হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি ‘বিকাশ’-এর মাধ্যমে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে লেনদেনের প্রায় ১৬ শতাংশ। বাকি মাত্র ২ শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে ১৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা।

More News Of This Category