1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

সফলতা পেতে সাহসী ও লড়াকু মনোভাব থাকা চাই!

‘প্রীতি বিউটি পার্লার’ ও ‘প্রীতি বুটিক অ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফটে’র স্বত্বাধিকারী প্রীতি ইসলাম পারভিন। বিউটি পার্লার ব্যবসার পাশাপাশি বুটিক শপে ও অনলাইনে বিক্রি করেন বুটিকের নানা পণ্য। শুরুটা ছিল নিজের গয়না বন্ধক রাখা অর্থের স্বল্প পুঁজি দিয়ে। খুব দরদি ও একই সঙ্গে খুব প্রতিবাদীও প্রীতি। ছোটবেলায় মানুষের দুঃখকষ্ট দেখে মনটা বিষিয়ে উঠত। কিন্তু করার তেমন কিছু ছিল না। তবু অপরের জন্য যতটুকু সম্ভব তাই করতেন, টিফিনের টাকা না খেয়ে অন্যকে দিয়ে দিতেন। নানা বাহানায় মা-বাবার কাছ থেকে নেওয়া টাকার অনেকটাই খরচ করতেন অনাথ, গরিবদের জন্য। তাই যেন পরিণত বয়সে এসেও সেই ছোটবেলার অভ্যাসটা ত্যাগ করতে পারেননি প্রীতি।

এখন নিজেই আয় করেন। সামর্থ্য অনুযায়ী গরিব-দুঃখীর পাশেও দাঁড়ান। প্রীতির উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্রাথমিক যাত্রাটা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখতাম মা বাসায় বসে সেলাই মেশিনে নানা ধরনের পোশাক তৈরি করতেন। সেটা দেখে দেখে সেলাই মেশিন চালানোটা আমিও শিখে ফেলি। ভাবতাম, আমিও একদিন বড় হয়ে নিজের ডিজাইনে পোশাক তৈরি করব। কিন্তু ওই ছোট্টবেলায়ই আমাকে সম্মুখীন হতে হয় চরম এক বাস্তবতার। তখন আমি সবে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরিবারের ইচ্ছায় বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। ওই বয়সে বইয়ের বদলে মাথায় নিতে হয় সংসার সামলানোর ভার। তার পরও শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেছি। অনেকবার নানা ধরনের ঝক্কি-ঝামেলায় লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবু হাল ছাড়িনি।

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই কোলজুড়ে আসে প্রথম সন্তান। সংসার, সন্তান, পড়ালেখা সব মিলিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটত।’ প্রীতি আরো বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে হলেও ডেমরার ভাঙাপ্রেস এলাকায় আমার জন্ম। স্বামীর বাড়ি সাভারে হলেও তারাও ডেমরায় ভাড়া থাকত। বিয়ের পর সংসার সামলে যে সময়টুকু পেতাম পড়াশোনা করতাম। এরপর এসএসসি পাস করি। এইচএসসিতেও সফলভাবে উত্তীর্ণ হই। একসময় আমি টিভিসিতে মডেলিং করতাম। নাটকেও অভিনয় করেছি। কিন্তু স্বামীর কাজের সূত্রে ২০০৮ সালে আমাকেও পাড়ি দিতে হয় সিঙ্গাপুরে। তখন আমার দুই সন্তান।

সেখানে গিয়ে মাস চারেক পর পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক সিঙ্গাপুরির সঙ্গে একটা বিউটি পার্লারে কাজ শুরু করি। সারা দিন দোকানের কাজ সেরে রাতে বাসায় এসে টেইলারিংয়ের কাজ করতাম। দুই সন্তানকে বাসায় একা রেখে কাজে যেতাম। কিন্তু ওই বয়সের সন্তানদের বাসায় একা রেখে যাওয়াটা যে কী বেদনার ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েক বছর। সিঙ্গাপুরে বাড়তি কাজ করে যে টাকা উপার্জন করতাম তার বেশির ভাগই বিলিয়ে দিতাম বরিশালের নিজের এলাকার গরিব-দুখী মানুষের মাঝে। এটাই আমার জীবনের বড় আত্মতৃপ্তির জায়গা।

এরপর ২০১৬ সালের শুরুতেই চলে এলাম দেশে। এসেই সিঙ্গাপুরের বিউটি পার্লারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে একটি বিউটি পার্লার দেব বলে মনস্থির করলাম। কিন্তু বাইরে কাজের পরিবেশ ছিল প্রতিকূল। পরিবার থেকেও কেউই মেনে নিতে চাইল না। অনেক বুঝিয়ে তবেই অনুমতি মিলল। অর্থের জন্য সব সময় স্বামীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকাটা আমার কাছে একদমই ভালো লাগত না। কারণ আমি মনে করি, একজন নারী প্রথমত অবদমনের শিকার হয় তার অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে। তা ছাড়া একজন মানুষ হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। যা হোক, অবশেষে মানিকনগরে ছোট্ট পরিসরে মাত্র দুজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করি ‘প্রীতি বিউটি পার্লার’। বিদেশের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিই বিউটি পার্লার ও বিউটিফিকেশন বিষয়ে, যা সফলভাবে আমার প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যাপক সাহায্য করেছে।’

বুটিকের ব্যবসায় কিভাবে যুক্ত হলেন, জানতে চাইলে প্রীতি বলেন, ‘পার্লার খোলার কিছুদিন পরে ভাবলাম নতুন আর কী করা যায়। মোটামুটি ভালো ফ্যাশন ডিজাইনের কাজ জানতাম। তার পরও এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে কোর্স করলাম ফ্যাশন ডিজাইনে। সঙ্গে সোশ্যাল কমার্স, ই-কমার্সসহ নানা কোর্স। আমি জানতাম এ কোর্সগুলো আমাকে বুটিকের কাজে খুব সহায়তা করবে। এর পরই পার্লারের কিছু আয়ের টাকা ও সামান্য কিছু জমানো আর নিজের গয়না বন্ধকের টাকা দিয়ে ছোট পরিসরে শুরু করি বুটিকের কারবার। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গেলেও মেলেনি কোনো ঋণ। তাই বলে থেমে থাকিনি। শত বাধা পেরিয়ে আজ দুটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। শুরুতে মাত্র দুজন নিয়ে হলেও এখন বিউটি পার্লার, বুটিক শপ ও অনলাইন বিজনেসে আমার অধীনে কাজ করছে প্রায় ১০ জন।’

অল্প কদিনের মধ্যেই বাড়ানো হবে অনলাইন বিজনেসের পরিধি। তখন আরো তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে—বললেন প্রীতি। জানালেন তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথাও। ‘মানিকনগর এলাকার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের আমার পার্লারে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দিই। যেন তারা সমাজের বোঝা হয়ে না থেকে, উপার্জনক্ষম হয়ে উঠতে পারে। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ফি নেওয়া হয়।’ ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, জানতে চাইলে প্রীতি বলেন, ‘প্রত্যেকেই চায় নিজের কাজের স্থানটা আরো বড় হোক। আমিও তাই চাই। যেন আরো অনেকে আমার এখানে কাজের সুযোগ পায়। সে লক্ষ্যেই কাজ করি।’

নতুনদের জন্য কিছু পরামর্শ জানতে চাইলে প্রীতি বলেন, ‘নিজে স্বাবলম্বী হব—এই ইচ্ছাটা প্রথমত পোষণ করতে হবে। সেটা ব্যবসা হোক বা চাকরি। বাবা বা স্বামীর অনেক আছে তাতে কী। আমি মনে করি প্রত্যেক নারীর একটা নিজস্ব পরিচয় থাকা দরকার। এতে যেমন নিজের একটা জগৎ তৈরি হয়, তেমনি ব্যক্তিজীবনে আসে সফলতা ও স্বাধীনতা। সেই সঙ্গে আর্থিক সচ্ছলতা তৈরির পাশাপাশি চাইলে সমাজের মানুষের জন্যও কিছু করা যায়। আর সেটা পাওয়ার আনন্দই আলাদা। তাই শত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও সাহস করে নিজেই শুরু করুন। দেখবেন পরিশ্রম কারো বিফলে যায় না, সফলতা ধরা দেবেই। নারীর দৃঢ় মনোবল তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সাহসী, সৃজনশীল আর লড়াকু মনোভাব থাকলে সফলতা আসবেই।’

তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ।

More News Of This Category