1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

হতে পারেন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার!

বর্তমান যুগে ক্যারিয়ার গড়তে প্রয়োজন নিশ্চিত ও কর্মমুখী শিক্ষা এবং এর সাথে সঠিক দিক নির্দেশনা। এই অবস্থায় যতগুলো বিষয় সামনে আসে তার মধ্যে অন্যতম হলো অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। সম্ভাবনাময় অটোমোবাইল শিল্পে কাজ করতে প্রয়োজন বেশ কিছু দক্ষ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার।

চাইলে আপনিও পারেন এই বিষয়ে লেখাপড়া ও সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন মাহবুব শরীফ বাংলাদেশে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশে-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সর্বপ্রথম অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু হয়।

এরপর চালু হয় ১৯৯২ সালে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে অনেকগুলো ইন্সস্টিটিউটেই এই কোর্সটি রয়েছে। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমানে একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই শিল্পে এখন প্রয়োজন বেশ কিছু দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার যারা একাধারে উত্পাদন, বিক্রি ও মেরামতে পারদর্শী। তাদেরকে ডিজাইন, ড্রইং ও ক্যালকুলেশনে অভিজ্ঞ হতে হয়।

কারিগরি ইঞ্জিনিয়াররাই সাধারনত এই ধরনের কাজ করে থাকে। অন্যদিকে যদি কেউ গাড়ি কেনাবেচায় ভালো পারদর্শি হতে চায় তা হলেও এই বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান থাকতে হবে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী গাড়িটি নির্বাচন করে তার হাজির করা, ইঞ্জিন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা প্রদান করাও এই বিভাগের জনবলেরই কাজ।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে তাকে কোন সাবজেক্ট নিয়ে লেখাপড়া করতে হবে, লেখাপড়ার সুযোগ কোথায় আছে, এই বিষয় নিয়ে কথা হয় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অটোমোবাইল বিভাগের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেনের সাথে। তিনি জানান, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে অবশ্যই চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।

এই কোর্সটি করার জন্য আমাদের দেশে সরকারি পর্যায়ে ঢাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশে-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নামে দুইটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বেসরকারী বেশ কয়েকটি ইনস্টিটিউট। এগুলো হলো- বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, মিরপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, চিটাগাং টেকনিক্যাল কলেজ এবং শ্যামলী ইনস্টিটিউটের আর একটি শাখা চট্টগ্রামে রয়েছে।

অনেকেই উচ্চ ডিগ্রী নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পাস করে ওখানেই বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করছেন। আবার কেউ কেউ দেশে ফিরে ভালো বেতনের চাকরি করছেন। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি করতে সরকারি ইনস্টিটিউটে খরচ হয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা এবং বেসরকারী ইনস্টিটিউটে খরচ হয় প্রায় ছয় লাখ টাকার মতো।

লেখাপড়া শেষে কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে তিনি জানান, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের বেশ চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে সরকারি বেসরকারী ইন্সস্টিটিউট থেকে প্রতিবছর আনুমানিক দুই’শ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার পাস করে বের হয়। মোট চাহিদার তুলনায় এ সংখ্যা অতি সামান্য। যারা পাস করে বের হচ্ছে তারা কেউই বসে নেই। বিআরটিএ ও বিআরটিসিতে প্রতিবছরই অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করছে এবং এই শিল্পকে সমৃদ্ধ হতে সাহায্য করছে। আমাদের দেশে গাড়ি উত্পাদনের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে কার সার্ভিস সেন্টারের তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বেশ কম। তাই এ সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। এ বিষয়ে পড়ালেখা করে সাধারণত চাকরির জন্য বসে থাকতে হয় না।

সদ্য পাস করা একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের আয় রোজগার সম্পর্কে মোসাদ্দেক হোসেন বলেন,‘সদ্য পাস করা একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রতিষ্ঠানভেদে ১২ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন। হাতে কলমে অভিজ্ঞতার পর একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন সাধারণত ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।’

তিনি আরও জানান, যদি কেউ কার সার্ভিসিং সেন্টার খুলতে চায় তাহলে স্থানভেদে সরঞ্জামাদিসহ এক কোটি টাকা বা তারও বেশি টাকা প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে আর্থিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিভিন্ন আর্থিক ব্যাংক সহায়তার হাত বাড়ায় ও সহায়তা করে। আয় রোজগারের হিসেবে দেখা যায় সমস্ত খরচ মিটিয়ে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের বাইরে কাজের সুযোগ তো রয়েছেই।

সেক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন এক লাখ টাকার বেশিও হতে পারে। মূলত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করবে বেতন। স্থানীয় একটি কার সার্ভিসিং সেন্টারের মালিক জাহিদ হোসেন জানান, একটি কার সর্ভিস সেন্টার গড়তে চাইলে প্রাথমিকভাবে মোটামুটি ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। চাইলে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করে ঋণের মাধ্যমে একটি কার সার্ভিসিং সেন্টার খোলা যায়।

নতুন যারা এই পেশায় আসছে তাদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মোসাদ্দেক হোসেন জানান, যে পরিমানে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা রয়েছে সে পরিমানে জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না। আবার যারা পাস করে বের হচ্ছে তাদের বেসিক কোর্সের ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। হাতে কলমে শিক্ষার জন্য অনেক সরঞ্জমাদি প্রয়োজন। নতুনরা সাধারনত সমস্যাগুলোরই সম্মুখীন হয়ে থাকে।

যারা অটোমোবাইল শিল্পে নিজেকে যুক্ত করে ক্যারিয়ার গঠন করতে চায় তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে তো বটেই, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। পেশা হিসেবে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার অন্য সব সম্মানজনক পেশার মতোই। একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি অনেককেই কাজের সুযোগ করে দিতে পারে।

আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করার সুযোগ রয়েছে। গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দেশের বাইরে যেতে হয়। দেশের বাইরে চাকরির জন্য যেতে চাইলে এ দেশ থেকে প্রচুর পরিমানে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে গেলে তার কাজের পরিধি ও জ্ঞান দুই বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের অনেকগুলো দেশে অটোমোবাইলে গ্র্যাজুয়েশনের পাশাপাশি কার মোডিফিকেশনের উপরেও ডিগ্রি প্রদান করা হয়। আমাদের দেশে অচিরেই অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শুরু হবে।’ তথ্যসূত্র: ইনকিলাব।

More News Of This Category